Ads

 ফরাসি কুঠি





ফরাসি কুঠি, ফরাশগঞ্জ ও ঢাকায় ফরাসিরা

ঢাকায় ফরাসি কুঠির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসন  প্রতিষ্ঠার বহু আগে। আর ঢাকার ফরাসিদের স্মৃতি বহনকারী স্থানের নাম  ফরাশগঞ্জ। ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি নৌবহর ঢাকায় এসেছিল। এরপর এ শহরে  স্থাপিত হয়েছিল ফরাসি বাণিজ্যকুঠি। 


১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় ফরাসি কুঠির  প্রধান ছিলেন এম গ্রেগোরি। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে নওয়াজিশ মোহাম্মদ ঢাকার নায়েব  নাজিম থাকাকালে তাঁর অনুমতি নিয়ে বুড়িগঙ্গার তীরে ফরাসিরা যে বাজার স্থাপন  করেছিল তার বর্তমান নাম ফরাশগঞ্জ। ওয়াইজঘাট এলাকায় ফরাসিরা কিছু বাড়ি কিনে  নিয়েছিল। বর্তমানে আহসান মঞ্জিল যেখানে অবস্থিত সেখানে আরো একটি ফরাসি  কুঠি ছিল। 


১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার  ইংরেজ কুঠি অধিগ্রহণ করেন। তখন ওই কুঠির তৃতীয় কর্মকর্তা লুক স্ক্রেফটন,  চতুর্থ কর্মকর্তা টমাস হাইন্ডম্যান ও পঞ্চম কর্মকর্তা স্যামুয়েল ওয়ালারসহ  সেনাধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কাডমোর, চিকিৎসক ইউলসন ও কর্মচারীরা ফরাসি কুঠিতে  আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইংরেজ কুঠির দ্বিতীয় কর্মকর্তা উইলিয়াম সামার তখন কলকাতায়  ছিলেন। 


১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে ফরাসি কুঠিটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৭৭৮  খ্রিস্টাব্দে তা ইংরেজ মালিকানায় যায়। ঢাকার বিখ্যাত আরমেনীয় ব্যবসায়ী  পোর্গোজ সাহেব ফরাশগঞ্জ বাজারটি ইজারা নিয়েছিলেন। ঢাকা তথা সেকালের বাংলার  অর্থনীতিতে ফরাশগঞ্জ বাজার ও ফরাসি সম্প্রদায়ের বিশেষ অবদান ছিল। এখানে ছিল  ফরাসি ব্যবসায়ীদের মসলার পাইকারি আড়ত এবং এখান থেকেই ঢাকার মসলিন কাপড়  ফরাসিরা রপ্তানি করত বিভিন্ন দেশে।


ইংরেজদের বিপদের দিনে (১৭৫৬ খ্রি.) কুঠির অধ্যক্ষ মনিয়ার কার্টিনসহ ফরাসিরা  তাদের আশ্রয় দিলেও পরে ইংরেজরা অনেক ফরাসি সম্পত্তি দখল করে নিয়েছিল। বলা  চলে তারা ফরাসিদের বিপরীত প্রতিদান দিয়েছিল। প্রথমবার ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে  (প্রত্যর্পণকাল : ১৭৮৩ খ্রি.), দ্বিতীয়বার ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ও তৃতীয়বার  ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে (প্রত্যর্পণকাল : ১৮১৫ খ্রি.) ইংরেজরা ফরাসি কুঠি দখল  করে নিয়েছিল। 


এসব কুঠি ছাড়াও তেজগাঁও এলাকায় ফরাসিদের মালিকানায় ছিল অনেক  ইমারত। ইংরেজদের দখলের ফলে ফরাসিরা তাদের কুঠি, ফরাশগঞ্জ বাজার ও  তেজগাঁওয়ের ইমারতগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল।


(সূত্র : যতীন্দ্রমোহন  রায়, ঢাকার ইতিহাস, ২০০৭ সংস্করণ, পৃ. ১৫৭)

Post a Comment

0 Comments