Ads

আর্কিমিডিস এর জিবন ও আবিষ্কার

 


ভাঙা যাবে না। আর্কিমিডিস খুব টেনশানে পড়ে গেলেন। টেনশানে পড়লে আমাদের অনেকেই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়। আর্কিমিডিস খাওয়া ছেড়েছিলেন কিনা জানিনা কিন্তু নাওয়া ছাড়েন নাই। স্নান করা ছেড়ে দিলে ভরের এই বিখ্যাত নিত্যতা সুত্র আবিষ্কৃত হত কিনা তা বলা যায় না। আর্কিমিডিস হাম্মাম খানায় গোসল করতে গেলেন। তখনকার দিনে মানুষ হাম্মামখানায় গোসল করতে যেত। সকল কাপড় খুলে রেখে উদোম গায়ে বাথটাবে শুয়ে গোছল করত। আর্কিমিডিস চিন্তায় ডুবে ছিলেন। কানায় কানায় টইটুম্বুর বাথটাবে তিনি নামলেন। কিছু জল উপচে পড়ল। আর্কিমিডিসের মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো। তিনি সহসা তার সমস্যার সমাধান করে ফেললেন। তিনি সোনার মুকুটের আয়তন বের করতে পারবেন মুকুটটি দ্বারা অপসারিত পানির পরিমান দ্বারা। বস্তুর দ্বারা অপসারিত পানির আয়তন এবং বস্তুর আয়তন সমান। আর্কিমিডিস তার নিজের আবিষ্কারে মুগ্ধ হলেন। তার আর তর সইছিলো না। সে তখনি রাজ প্রাসাদে ছুটলেন। তার খেয়াল ছিলোনা যে তার পরনে কোন পোষাক নাই। সিসিলির রাস্তা দিয়ে নগ্ন আর্কিমিডিস “ইউরেকা” “ইউরেকা” বলে চিৎকার করে দৌড়াতে লাগলেন। গ্রীক ভাষায় ইউরেকা বলতে বোঝানো হয় আমি পেয়েছি। সোনার সাথে যদি অন্য কোন কম ঘনত্বের ধাতু মেশানো হয় তবে অপসারিত পানির পরিমান সমপরিমান খাঁটি সোনা দ্বারা অপসারিত পানির পরিমানের থেকে কম হবে। আর্কিমিডিস পরীক্ষা দ্বারা প্রমান করলেন মুকুটে রূপা মিশিয়ে ভেজাল দেয়া হয়েছে। চতুর্থ অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে লিখিত লাতিন কবিতা “কারমেন দে পনদেরিবাস এট মেনসুরিস”য় আর্কিমিডিসের সোনার মুকুটের খাঁদ নির্ণয়ের কথা বলা হয়েছে।

 

আর্কিমিডিসের মৃত্যুঃ ভৌগলিক ও রাজনৈতিক কারণে সিসিলি গুরুত্বপূর্ন অবস্থানে ছিলো। রোমান এবং কার্থেজদের মধ্যে ভয়াবহ দ্বিতীয় পুনিক যুদ্ধ শুরু হয়। দুই দেশের মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় স্বভাবতই সিসিলি যুদ্ধকে এড়িয়ে যেতে পারলো না। আর্কিমিডিসের গাণিতিক কৌশলে দুই বছরের মত সিরাকুস আত্মরক্ষা  করতে সমর্থ হয়। আর্কিমিডিস সমুদ্র উপকূলে বিশাল বিশাল দর্পণ স্থাপন করেন। সূর্য্যরশ্মিকে দর্পণে প্রতিফলিত করে তিনি শত্রুজাহাজে আগুন ধরিয়ে দিতেন। তখনকার সময়ে জাহাজ নির্মিত হত কাঠ দিয়ে। কাঠ আর আগুনের সম্পর্ক তো আমাদের সবার জানা। কোথাও কিছু নেই। হঠাৎ গরম হাওয়া এসে জাহাজে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ভৌতিক এই ব্যাপারে শত্রুপক্ষ কাবু হয়ে গেলো। তারপর একসময় রোমানরা শহর দখল করে নেয়। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্লুতার্কের বর্ণনা অনুসারে খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ২১২ সালে “মারকুস ক্লডিয়াস মারসেলাস” সিরাকুস দখল করে নেন। মারসেলাস গণিতবিদ আর্কিমিডিসকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। তিনি মহামান্য এই মনিষীকে দেখতে চাইলেন। তিনি সৈন্যদের বললেন আর্কিমিডিসকে তার দরবারে হাজির করতে। রাজানুগত সৈন্যদের স্বভাবটাই এরকম যে ধরে আনতে বললে বেঁধে আনে। দেশে এই দূর্যোগ চলছে আর্কিমিডিসের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। তিনি গণিতের জটিল কোন সমস্যার সমাধানে মগ্ন ছিলেন। সৈন্য আর্কিমিডিসকে আদেশ দিলো তার সঙ্গে মারসেলিয়াসের গৃহে যাওয়ার জন্য। আর্কিমিডিস সৈন্যের আদেশ প্রত্যাখান করে আবার গাণিতিক সমস্যার সমাধানে নিমগ্ন হলেন। অনেকে বলে থাকেন আর্কিমিডিসের শেষ উক্তি ছিলো “আমাকে বিরক্ত করো না।” [ আর্কিমিডিস যে শেষ মূহুর্তে এই কথাটি বলেছিলেন সে বিষয়ে গ্রহনযোগ্য কোন উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না। হাতে অস্ত্র থাকলে মানুষের স্বভাব এমনিতেই হিংস্র হয়ে যায়। সৈন্য তার মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। কোষ থেকে তরবারি উন্মুক্ত করে আর্কিমিডিসের গর্দান বরাবর চালিয়ে দিলেন। পৃথিবী এক মহা মানবকে চিরতরে হারালো। পঁচাত্তর বছর বয়সে। ঠিক হারিয়ে যায় নি। আমি তুমি আমরা সবাই একদিন নেই হয়ে যাবো। অনাগত ভবিষ্যত আর্কিমিডিসের মত কিছু জ্ঞানপিপাসু মহামানবকে চিরদিন মনে রাখবে।

 

আর্কিমিডিসের মৃত্যুর খবর পেয়ে মারসেলাস বড়ই ব্যথিত হলেন। সেকালে শত্রু পক্ষের লোকের লাশকে নানাভাবে নিঃগৃহিত করা হত। মারসেলাস যথাযথ সম্মান সহকারে আর্কিমিডিসের শেষকৃত্যু সম্পাদনের নির্দেশ দিলেন। আর্কিমিডিসের পূর্ব ইচ্ছা অনুযায়ী তার সমাধিতে একটি সিলিন্ডারের ভিতরে গোলক রাখা হয়। এটি আর্কিমিডিসের বিখ্যাত একটি আবিষ্কার। স্কুলে পড়ার সময় আমরা অনেকেই পড়েছি। গোলকের আয়তন সিলিন্ডারের আয়নের দুই তৃতীয়াংশ। কিন্তু কখনো কি জানার চেষ্টা করেছি সর্বপ্রথম কে এটা প্রমান করেন?

 

খ্রিষ্ট্রপূর্ব ৭৫ অব্দে আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর সিসিলি শাসন করতেন রোমান রাজা ওরাতোর সিসেরো। তিনি আর্কিমিডিসের সমাধি সম্পর্কে অবগত হলেন। কিন্তু এর অবস্থান সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য জানতেন না। স্থানীয় লোকেরা কোন তথ্য জানাতে পারলো না। সিরাকুসের এগরিগেন্টেন গেটের কাছাকাছি জায়গায় তিনি আর্কিমিডিসের পরিত্যক্ত সমাধি খুঁজে পান। ভগ্ন সমাধির গায়ে বুনো লতা জন্মেছে প্রচুর পরিমানে। সিসেরো সমাধিকে পরিচ্ছন করেন। তিনি সমাধি গাত্রে লেখা কিছু লিপি’র পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হন। তারপর একসময় কালের গর্ভে আর্কিমিডিসের সমাধি আবার হারিয়ে যায়। ১৯৬০ সালে সিরাকুসের এক হোটেলের উঠোনে পরিত্যক্ত এক সমাধিকে আর্কিমিডিসের সমাধি বলে দাবি করা হয়।

 

Post a Comment

0 Comments